মেঘের সাথে একদিন

হ্যাঁ, পাহাড় ঝরনা আর মেঘের সাথে মিতালীর প্রবল ইচ্ছা থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম এবারের ভ্রমণটা হবে বান্দরবানের নীলগিরি। অনেক উত্সাহ উদ্দীপনায় মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা হলাম আমরা ঘুরি বাংলাদেশ গ্রুপের ১০ সদস্যের একটি দল। চট্টগ্রামের একরাত বিরতি দিয়ে পরের দিন বিকেলে বান্দরবান জেলা শহরে পৌঁছাই এবং হোটেল প্যারাডাইসে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত হয়। রাতেই নীলগিরি যাওয়ার জন্য চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া করা হয়। ভোর ৫টায় রওনা দিতে হবে তাই তারাও এরইমধ্যে ঘুমিয়ে গেছে। তবে আমরা কেউই রাত সাড়ে ১২টার আগে ঘুমাতে পারিনি।

কাক ডাকা ভোর। হোটেলের জানালে খুলে দেখা গেল চারদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। চাঁন্দের গাড়ি এসে হাজির, শুধু হাজির হইনি আমরা। একে একে সবাইকে হোটেল থেকে বের করে যখন নিজে প্রস্তুতি নিতে ছিলাম তখন ফোন বাজছে তো বাজছেই। তাড়াতাড়ি রওনা হলাম চাঁন্দের গাড়িতে। কনকনে শীত, ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়া, প্রথমে কুয়াশা মনে হলেও চাঁন্দের গাড়ির ড্রাইভার মনের ভুল ভেঙে দিয়ে বললেন এগুলো মেঘ। অবাক করা দৃশ্য আর অনুভূতি। মেঘের ভেতর দিয়ে আমরা শুধু ওপরে উঠছি আর নামছি। উঠছি আর নামছি। বান্দরবান শহর থেকে যখন আমরা পাহাড়ি পথ ধরে নীলগিরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখনো পাহাড়ি জনপদে কোনো পাহাড়ি জনগণ চোখে পড়েনি। মনে হচ্ছে একটু পড়ে ঘুম ভাঙবে। হয়তো যার যার কাজে বের হবে তারা। একদিকে বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে মেঘের খেলা, অন্যপাশ মনে হয় কত নিচে। ভয়ঙ্কর অনুভূতি। এক পাহাড়ি মহিলা তার কুঁড়ে ঘর থেকে বের হয়েছে কলার হানা নিয়ে বাজারে যাবে বলে, কিন্তু বিধিবাম! আমরাই সব কিনবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।—কত টাকা, সব দিন আমাদের। কিনে নিলাম সব কলা! গাড়িতে কলার কাঁদি বেঁধেই চলছে কলা খাওয়ার উত্সব। আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা যখন চিম্বুক সেনাক্যাম্পে হাজির তখন আমাদের সামনে হাজির হলো সকালের নাস্তা ভুনা খিচুরি আর ডিম। অসাধারণ রান্না। নাস্তার পাশাপাশি চিম্বুক সূর্যোদয়ে চলে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। পেছনে বিস্তৃর্ণ এলাকা মেঘে ঢাকা। ভেসে আসছে শীতের কনকনে শীতল হাওয়া। সকালের নাস্তাটা সেরে রওনা হলাম আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে নীলগিরির দিকে। পেটে যখন খানা পড়েছে মনে তখন আনন্দ এসেছে। গাইতে লাগলাম সবাই পাঁচমিশালি গান। অসাধারণ এই অনুভূতি ভাষা প্রকাশ করা সত্যিই খুর কঠিন। কখন যাবো নীলগিরি মনে উত্তেজনা। হইহুল­ুর আর গানের এক পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের নীলগিরি। দৌড়ে ওপরে উঠলাম আর দেখলাম প্রাকৃতির লীলাখেলা। সত্যিই কি মেঘের ওপরে আমরা! ঘোরাঘুরি ছোটাছুটি আর ছবি তোলা। একটু বলে রাখি, সমুদ্রপিষ্ঠ হতে ২২০০ ফুট উচ্চতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এ নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড় এবং আকাশের মিতালীর এক অপূর্ব নিদর্শন। সকাল-বিকেল মেঘের খেলা বিরাজ করলেও দুপুরে আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে খালি চোখে বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। মাথার ওপরে সূর্য্য উঁকি দিচ্ছে আর মেঘেরা পালিয়ে যাচ্ছে। দেখলাম কিভাবে পাহাড় মেঘের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ২ ঘণ্টা শেষ করে ফেরার প্রস্তুতি নিলাম আমরা। সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চায়ের দোকানে চা পান করে স্মৃতিস্বরূপ কিছু কেনাকাটা করে চিম্বুক ও শৈলপ্রপাতের দর্শন নিয়ে চাঁন্দের গাড়ি চড়েই আবার দুপুর ২টার দিকে হাজির হলাম বান্দরবান শহরে। মজায় কটানো এই সময় কখনো ভোলার নয়। সময়ের কারণে অনেকটা অতৃপ্তি নিয়েই ফেরার পথে পা বাড়ালাম। হয়তো আবারো দেখা হতে নীলগিরি। ভালো থেকো, ভালো রেখো।